হোটেল এন্ড রিসোর্টে বিনিয়োগঃ রিটার্ড লাইফ নিরাপদ থাকুক

কিভাবে হোটেল এন্ড রিসোর্ট এ বিনিয়োগ করে অবসর জীবনকে নিরাপদে রাখবেন:

অবসর জীবনের কথা ভেবে অনেকেই হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েন কারণ রিটার্ড লাইফ মানেই যেন অনিশ্চিত জীবন। বর্তমান সময়ের দিকে তাকালে কেউই অনিশ্চিত জীবন যাপন করতে চান না বিশেষ করে যখন সুযোগ রয়েছ অবসর জীবনকে নিশ্চিত করার।

অবসর গ্রহণের জন্য সঞ্চয় করার অনেক উপায় আছে। কিন্তু কোনটি আপনার জন্য সঠিক সেটা বেছে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। একটি জনপ্রিয় বিকল্প হল হোটেল এন্ড রিসোর্ট এ বিনিয়োগ করা। এই বিনিয়োগগুলি সময়ের সাথে সাথে বৃদ্ধি পায়। আপনি অবসর নেওয়ার সময় এবং পরেও আপনাকে আয়ের একটি স্থির উৎস হয়ে উঠবে।

যেহেতু, অনেক কম ব্যক্তি আছেন যারা অবসর গ্রহণের সঠিক সময় বিবেচনা করে তার ভিত্তিতে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তাই সকল কর্মজীবী মানুষ অবসরে যাওয়ার পরিকল্পনা না করলেও অবসরে যাওয়ার পরে যাতে কর্মহীন হয়ে অর্থ ভোগান্তিতে পড়তে না হয়, এরই বিকল্প মাধ্যমে হিসেবে হোটেল এন্ড রিসোর্ট গুলতে বিনিয়োগ করা। আজই পরিকল্পনা শুরু করুন এবং দেখুন আপনার অবসর কতটা সহজ হয়।

অবসর জীবনকে নিরাপদে রাখার পদক্ষেপ:

এখন অবসর নিতে গেলে এখন অনেককিছু চিন্তা ভাবনা করতে হয়। আর্থিকভাবে সুরক্ষিত থাকতে, স্বাস্থ্য-সম্পদ বজায় রাখতে, অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে, মহামারি বা মুদ্রাস্ফীতির মতো যেকোনো জরুরী অবস্থার জন্য প্রস্তুত থাকতে, চাকরি পরবর্তী রিটার্ড লাইফ নিরাপদ রাখতে সবচেয়ে উত্তম পন্থা হল বিনিয়োগ।

আপনার জীবনযাত্রার ব্যয়, স্বাস্থ্যসেবা এবং চাকরি না থাকার অভাব সহ অবসর জীবনের পরিকল্পনা শুরু করার অনেক কারণ রয়েছে। আপনি যদি অবসর যাপনের জন্য প্রস্তুত না হন, তাহলে পরবর্তীতে

এই চাহিদা পূরণ করা কঠিন হয়ে পারে। তাই সবচেয়ে ভালো উপায় হলো অবসরে যাওয়ার আগেই অবসর পরিকল্পনা করা।

অপ্রত্যাশিত বিশ্ব অর্থনীতি এবং আর্থিক অবস্থার ফলে অবসরের জন্য কিছু দরকারী পদক্ষেপ নিয়ে রাখতে হয়  যা আপনাকে আর্থিক স্বাধীনতার পথে নিয়ে যেতে পারে। আসুন জেনে নেই কিভাবে পরিকল্পনার সাথে হোটেল-রিসোর্ট বিনিয়োগ এর মাধ্যমে অবসর জীবনকে নিরাপদ রাখা যায়।   

 

হোটেল–রিসোর্ট বিনিয়োগ কি? 

হোটেল বা রিসোর্ট হল একটি সম্পত্তি, যখন কোনো  বিনিয়োগকারী এই হোটেল বা সম্পত্তিতে বিনিয়োগ করেন তা হোটেল শিল্পের মধ্যে পড়ে।

বহির্বিশ্বের ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ক্রীড়াসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে দেশের যোগাযোগ বেড়ে যাওয়া আগের চেয়ে বেশি বিদেশি পর্যটক ভ্রমণে আসছেন বাংলাদেশে। ফলে সামগ্রিকভাবে দেশে পর্যটন চাহিদা বেড়েছে। এমন চাহিদা বিবেচনায় দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তারা পর্যটনের বিভিন্ন খাতে তিন, পাঁচ, সাত তারকা হোটেল, রিসোর্ট ও মোটেল নির্মাণে বিনিয়োগ করছেন যা হোটেল-রিসোর্ট শিল্পের মূলে।

হোটেল বা রিসোর্ট বিনিয়োগকারীরা সর্বদায় এমন বিনিয়োগ খুঁজেন যা স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী উভয় সুবিধা প্রদান করে।

হোটেল বিনিয়োগে দুই ভাবে বিনিয়োগ হয়ে থাকে সাধারণত। প্রথমত, কিছু হোটেল বিনিয়োগকারী শুধুমাত্র তাদের হোটেল বিনিয়োগের উপর ফোকাস করে, এবং হোটেলগুলি দ্রুত আয় তৈরি করার ক্ষমতা প্রদান করে, এই ধরনের হোটেলগুলো কৌশলগতভাবে অবস্থিত এবং সাবধানে পরিচালিত হয়। এবং দ্বিতীয়ত অন্যান্য বিনিয়োগকারীরা একটি সম্পত্তি পোর্টফোলিওকে বৈচিত্র্যময় করার জন্য হোটেল বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকেন।

হোটেল বা রিসোর্টে বিনিয়োগ অন্যান্য সম্পত্তি বিনিয়োগ থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে পৃথক হবে। সাফল্য এবং ব্যর্থতা কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার উপর অনেক বেশি নির্ভর করে, তবে অন্যান্য ধরনের সম্পদের তুলনায় বাজারের প্রবণতা এবং আকস্মিক ওঠা নামার উপর নির্ভরতা কম, যা কারও কারও কাছে আবেদনশীল হতে পারে।

বিনিয়োগ নিয়ে আরও বিস্তারিত জানতে চাইলে ভিজিট করতে পারেন বিনিয়োগ নিয়ে বিস্তারিত লেখা আমাদের এই ব্লগটি (বিনিয়োগ কি? কেন? কিভাবে?) 

হোটেলে– রিসোর্ট এ কেন বিনিয়োগ করবেন?

চাকরি থেকে অবসর নেয়ার সাথে সাথেই কেউ মারা যান না। সরকারী রিপোর্ট বলে স্বাস্থ্য সম্মত জীবন যাপনের কারনে কমে যাওয়া গড় আয়ু কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। আপনি কত দিন বাঁচবেন তা যেমন নিশ্চিত নয় তেমনই বাজারের অবস্থা কখন কেমন থাকবে কেউ বলতে পারে না।

যত বেশি আয় করুন না কেন অভাব আর প্রয়োজন কখনো কম হয় না। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চাহিদা কিন্তু ইনকাম কি বাড়ছে? অথচ চাকরি শেষে অবসরে যাবেন এমন সময় সব কিছু ব্যাল্যান্স করতে হলে কি করবেন? কিভাবে ম্যানেজ করবেন? অথবা আপনি এখন অবসর যাপন করছেন কিভাবে সবকিছু সামাল দিচ্ছেন এই পরিস্থিতিতে?

সেভিংস দিয়ে সব সময় চলা সম্ভব নয়, বাড়তি ইনকাম থাক খুবই জরুরী। চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পরও নিজেকে এবং পরিবার কে সময় উপযোগী করে চলতে, পরিচালনা করতে হলে বিশেষ করে রিটার্ড লাইফ সিকিউর করতে এক্সট্রা ইনকাম থাকা অত্যন্ত জরুরী। বরং একটু কম খরচ করে সেভিংস এর অর্থ জমিয়ে হোটেলে- রিসোর্ট বিনিয়োগ করলে ভবিষ্যৎ এর লাগামহীন চাহিদাকে সহজে নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হবে।

 হোটেল এবং রিসোর্টে বিনিয়োগ ঐতিহ্যগতভাবে সম্পদ বৃদ্ধি করার একটি নিরাপদ উপায়। এ ধরনের বিনিয়োগ একটি স্থির আয়ের প্রবাহ প্রদান করে যা অবসর জীবনেও হতে পারে নিরাপদ আয়ের উৎস। অবসর জীবনে বৈচিত্র্য আনতে এবং সম্পত্তির মালিকানার সুবিধা উপভোগ করতে এই ধরনের বিনিয়োগগুলো সর্বদায় উত্তম।

অবসর গ্রহণের পর আপনার কেমন সঞ্চয় প্রয়োজন? 

যা ধরা যাক বাংলাদেশের গড় আয়ু ৭৪— একজন অবসরপ্রাপ্ত হিসাবে আপনার ৬০ বছর বয়সের মধ্যে কমপক্ষে  প্রতি বছর ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা প্রয়োজন৷ অবসর গ্রহণের সময় থেকে পরবর্তী ১৫ বছরের জন্য আপনার মাসিক খরচ নিরাপদে কভার করতে যা প্রয়োজন, সেই টাকায় আপনার প্রাইভেট রিটায়ারমেন্ট স্কিম, নগদ, আয় ইত্যাদি থেকে সবকিছু অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।

 আপনার প্রাক-অবসরকালীন জীবনযাত্রার মান বজায় রাখতে আপনার প্রয়োজন চূড়ান্ত আয়ের দুই-তৃতীয়াংশ অর্থ। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি আপনার কাজের শেষ বছরে মাসিক ১২০,০০০ টাকা আয় করেন, তাহলে আশা করুন আপনি অবসর নেওয়ার সময় প্রতি মাসে ৮০,০০০ টাকা লাগবে। বিকল্পভাবে, আপনি আপনার জীবনধারা ডাউনগ্রেড করতে পারেন। অন্যান্য অবসর পরিকল্পনাকারীরা বলছেন যে আপনি অবসর গ্রহণের পরে একই মানের জীবন বজায় রাখতে আপনার প্রাক-অবসরকালীন আয়ের ৮০% প্রয়োজন।

আপনার বার্ন রেট কত কেমন তা জানলে আপনি সহজে অনুমান করতে পারবেন যে আপনার বাসা কতক্ষণ স্থায়ী হতে পারে। আপনি যুক্তিসঙ্গতভাবে আপনার অবসর গ্রহণের প্রথম বছরে আপনার সঞ্চয়ের ৪% প্রত্যাহার করার আশা করতে পারেন এবং পরবর্তী বছরগুলোতে মূল্যস্ফীতি এবং জীবনযাত্রার ব্যয়ের সামঞ্জস্যের কারণ হিসাবে এই পরিমাণ বৃদ্ধি করতে পারেন। যদিও এগুলি নিখুঁত নয়, এটি অবসর গ্রহণের প্রস্তুতির একটি অনুমান মাত্র।

হোটেল বা রিসোর্টে বিনিয়োগ এর ধরন:

হোটেল বা রিসোর্টে বিনিয়োগ সার্থক হওয়ার কিছু মূল কারণ অনুসন্ধান করলে দেখা যায় মৌলিক স্তরে, একটি হোটেল দীর্ঘমেয়াদী আয় প্রদান করতে পারে, যা সম্পদ প্রসারিত করতে, একটি ব্যবসায়িক পোর্টফোলিওকে বৈচিত্র্যময় করতে এবং সাধারণ অবসরের বয়সের বাইরে অদূর ভবিষ্যতের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য আয়ের প্রস্তাব দিতে পারে।

হোটেল বা রিসোর্টগুলি অফার করে এমন সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ গুণগুলোর মধ্যে একটি, যা অন্য সম্পত্তি বিনিয়োগ করে না, যে কোনও সময় রুমের রেট সামঞ্জস্য করার ক্ষমতা৷ যেহেতু হোটেল শিল্পের মধ্যে চাহিদা স্থানীয় কারণের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল হতে পারে, তাই হোটেল মালিক এবং বিনিয়োগকারীরা উচ্চ চাহিদার সময়কে সম্পূর্ণরূপে পুঁজি করতে পারে এবং নিম্ন-চাহিদার সময়ের কারণে সৃষ্ট ক্ষতি কমাতে পারে। হোটেলগুলি কৌশলগতভাবে নির্দিষ্ট ধরণের অতিথিদের দিকেও লক্ষ্যবস্তু হতে পারে।

হোটেল এন্ড রিসোর্ট এ বিনিয়োগ কেন গুরুত্বপূর্ণ?

কোন অর্থ বা সম্পদ কে মূলধন হিসেবে কাজে লাগালে পরবর্তীতে সেই মূলধন বৃদ্ধি পাওয়ার প্রক্রিয়া হল  বিনিয়োগ।  

বিনিয়োগের বৃহত্তর বৃদ্ধির সম্ভাবনা প্রাথমিকভাবে চক্রবৃদ্ধি ক্ষমতার কারণে হয়ে থাকে। স্মার্ট বিনিয়োগ আপনার অর্থকে মুদ্রাস্ফীতিকে পেছনে ফেলে মূল্য বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

আপনার সাশ্রয়ের অর্থ থেকে একটি অংশ সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে লাভজনক ও কম ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় মূলধন হিসেবে ব্যাবহার করে অধিক অর্থ বৃদ্ধি করা হতে পারে আপনার জন্য লাইফ সেভার। জীবনে চাপ মুক্ত থাকতে চাইলে বিনিয়োগ পরিকল্পনা করা মানে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেয়া।    

হোটেল এন্ড রিসোর্ট এ বিনিয়োগ করার বিশেষ সুবিধা

“যেকোনো ব্যক্তির জন্য সেরা বিনিয়োগ হল নিজের উপরে বিনিয়োগ করা।”

 – ওয়ারেন বাফেট

আপনার নিজের ক্ষমতার উন্নতিতে বিনিয়োগ করুন। সেটাই হবে পৃথিবীর সবচাইতে উত্তম বিনিয়োগ।  যেখানে আপনার পরিবার সহ আপনি আজীবন ক্যাশ ফ্লো এর সাথে প্রেস্টিজিয়াস জীবন উপভোগ করবেন তাও আবার অবসর জীবনের!

এতোসব সুযোগ-সুবিধার  জন্য হোটেল এন্ড রিসোর্ট এ বিনিয়োগ বর্তমান সময়ে সবচাইতে সেরা। কারণ হোটেল এন্ড রিসোর্ট এ বিনিয়োগ করার বিশেষ কিছু সুযোগ-সুবিধা থাকে যেমনঃ

১। নিজে জায়গার মালিক হওয়া

২। আজীবন উচ্চ রিটার্ন এর সাথে মুনাফা অর্জন

৩। অর্থনৈতিক লাভ এবং রাজস্ব নিয়ন্ত্রণের সুবিধা

৫। নিজের মালিকানাধীন হোটেল অবকাশ যাপনের সুবিধা

৬। পরিবারসহ প্রেস্টিজিয়াস লাইভ লীড করার সুযোগ, যা আপনার অবসর জীবন কে অনেক সম্মানীয় পর্যায়ে নিয়ে যায়।

সুতরাং, হোটেল এন্ড রিসোর্ট এ বিনিয়োগ যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। আপনার মূল্যবান অর্থকে কাজে লাগিয়ে সম্ভাব্য সম্পদ গড়ে তোলার একটি কার্যকর স্মার্ট উপায় হল বিনিয়োগ। আপনার জীবনযাত্রার মান বাড়াতে, অবসর জীবনের পরিকল্পনা শুরু করার জন্য বা নিশ্চিন্তে অবসর যাপনের জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় হলো হোটেল এন্ড রিসোর্ট এ বিনিয়োগ করে সম্মানের সাথে নিরাপদ ও আলিশান জীবন যাপন করা।